সংবাদ শিরোনাম:

ট্রাক ড্রাইভার হত্যাকান্ডে বাউফলে ব্যবসায়ীর গোডাউন থেকে ছিনতাইকৃত রড উদ্ধার, আটক ৪

Facebook
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print

মোঃ ফরিদ উদ্দিন, পটুয়াখালী:

ট্রাক ড্রাইভার মোঃ আল-আমিন (৩৩) কে হত্যা করে ট্রাক ও ট্রাকে থাকা বিপুল পরিমাণ রড ছিনতাইয়ের ঘটনায় ছিনতাইকৃত ৯ মেট্রিকটন রড উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৩শে এপ্রিল) রাতে বাউফল থানা পুলিশের সহযোগিতায় দশমিনা থানা পুলিশ ও দশমিনা নৌ পুলিশ অভিযান চালিয়ে বাউফলের দাসপাড়া বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন একতা এন্টারপ্রাইজের গোডাউন থেকে রডগুলো উদ্ধার পূর্বক একতা এন্টারপ্রাইজের তিন ম্যানেজারকে আটক করে।
একতা এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী মাসুদ রানার ম্যানেজার নান্নু সহ তিন ম্যানেজার রডগুলো আত্মগোপনে থাকা ট্রাকের হেলপার হাসানের কাছ থেকে ক্রয় করেছিলেন বলে জানা যায়। ছিনতাইকৃত রড ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যস্থতা করেন দশমিনার স্কুল শিক্ষক মোঃ মজিবর রহমান নামের এক ঠিকাদার। পরপরই ওই রাতেই পুলিশের টিম তিন ম্যানেজারকে আটকপূর্বক সাথে নিয়ে গিয়ে ওই স্কুল শিক্ষক ও ঠিকাদার মোঃ মজিবুর রহমানকে তার বাসা থেকে আটক করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১৭ই এপ্রিল চট্টগ্রামের আবুল খায়ের ইন্ডাট্রিজ এর কারাখানা থেকে ঢাকা মেট্রো-ট-১৬-৫১৩৮ নম্বরের ট্রাকটি ১৩ মেট্রিকটন রড নিয়ে বাউফলের কালিশুরী বাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। পরের দিন ১৮ই এপ্রিল কালিশুরীর খান এন্টারপ্রাইজে রডগুলো আনলোড করার কথা। কিন্তু ১৮ই এপ্রিল ট্রাকের ড্রাইভার আল আমিনকে ফোন করে বন্ধ পান তার মামা মোঃ সবুজ।
এদিকে ২০ই এপ্রিল দশমিনার নদীতে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। পরে মামা সবুজ খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন ওই লাশ তার ভাগ্নে আল আমিনের। ময়নাতদন্ত শেষে আল আমিনের লাশ পরের দিন চাঁদপুরে নিয়ে দাফন করা হয়। এব্যাপারে দশমিনা থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন আল-আমিনের মামা সবুজ। এরপরই ঘটনার রহস্য উদঘাটনে নামে পুলিশের একাধিক টিম।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দশমিনা নৌ পুলিশের এসআই আল মামুন বলেন, ট্রাকের ড্রাইভার আল আমিনকে খুন করে ঘাতকরা রডগুলো কালাইয়া বাজারের একতা এন্টারপ্রাইজের মালিক মাসুদ রানার কাছে নগদ টাকায় বিক্রি করে দেয়। মাসুদ রানা ওই রডগুলো গুদামে রেখে দেন। তদন্তের একপর্যায়ে নিশ্চিত হয়েই রডগুলো মঙ্গলবার রাতে ওই গুদাম থেকে জব্দ করা হয়। আর আল আমিন হত্যাকান্ডের মুল নায়ক আত্মগোপনে থাকা ট্রাকের হেলপার হাসানকে আটকের জন্য অভিযান চলছে। এদিকে রড পরিবহনের কাজে নিয়োজিত ট্রাকটি পুলিশ বাকেরগঞ্জের বোয়ালিয়া বাহাদুরপুর এলাকা থেকে উদ্ধার করে।
আল আমিনের মামা সবুজ বলেন, “ছোটবেলায় আল আমিনের বাবা-মা মারা যান। এরপর থেকে তার কাছেই বড় হন আল আমিন। মামা সবুজের বাড়ি চাঁদপুর জেলার মতলব থানার লামছড়ি গ্রামে। বর্তমানে তিনি থাকেন নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা বউবাজার এলাকায়। সবুজ তার ভাগ্নেকে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দিয়ে একটি ট্রাক কিনে দেন। মামার ট্রাক চালিয়ে আল আমিন আয়রোজগার করতেন। ১৭ই এপ্রিল চট্টগ্রামের ট্রান্সপোর্ট ম্যানেজার রনজিৎ মজুমদারের সঙ্গে চুক্তি করে রডগুলো বাউফলের কালিশুরী বন্দরে পৌঁছে দেয়ার জন্য আবুল খায়ের ইন্ডাট্রিজ এর ফ্যাক্টরী থেকে রওয়ানা দেয় আল আমিন। সঙ্গে ছিলেন ট্রাকের হেলপার হাসান। হাসানের বাড়ি পটুয়াখালী হওয়ায় এই রুট তার চেনা ছিলো। আল আমিন প্রথম এই রুটে ট্রাক নিয়ে আসেন। আমার এতিম ভাগ্নেকে নির্মমভাবে খুন করা হলো। আমি খুনিদের উপযুক্ত বিচার চাই।”
ছিনতাইকৃত রড ক্রয়ের ব্যাপারে একতা এন্টারপ্রাইজের মালিক মাসুদ রানা সাংবাদিকদের বলেন, “আমি মজিবর নামের এক ঠিকাদারের কাছ থেকে রডগুলো ক্রয় করেছি। তিনি (মজিবর) আমার পূর্ব পরিচিত। রডগুলো ছিনতাইকৃত কিনা তা আমার জানা ছিল না। আল আমিন হত্যাকান্ডের বিষয় আমি কিছুই জানি না। কারন ওই রডগুলো যখন আমার ম্যানেজারেরা ক্রয় করেছিল তখন আমি ঢাকাতে ছিলাম।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, “আল আমিনকে পরিকল্পিতভাবে খুনের পর রড ছিনতাই করা হয়েছে। আর ছিনতাইকৃত রড পাওয়া গেছে একতা এন্টারপ্রাইজে। সুতরাং একতা এন্টারপ্রাইজের মালিক মাসুদ রানা কোনো ভাবেই দায় এড়াতে পারেন না।”
বাউফল থানার ওসি শোনিত কুমার গায়েন বলেন, “বিষয়টি দশমিনা থানার। রড উদ্ধারের সময় আমরা সহযোগীতা করেছি মাত্র। এর বাইরে আর কিছুই বলতে পারছি না।”
এ প্রসঙ্গে পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মোঃ সাইদুল ইসলাম বিপিএম পিপিএম বলেন, “মামলার তদন্ত এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি। তদন্তে যারা অপরাধী প্রমানিত হবে তাদের প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আনা হবে।”

Facebook
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *