সংবাদ শিরোনাম:

২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশে সহিংসতা, এখনও উদ্ধার হয়নি পুলিশের অস্ত্র, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ

Facebook
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print

নিজস্ব প্রতিনিধি:

বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গত বছরের ২৮ অক্টোবর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল রাজধানীর পল্টন ও আশপাশের এলাকা। এসময় এক পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা, পুলিশের অস্ত্র ছিনতাই, প্রধান বিচারপতির বাসভবন ও পুলিশ হাসপাতালে হামলাসহ ব্যাপক সহিংস কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছিল দুর্বৃত্তরা। এসব ঘটনায় ৪৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু ঘটনার পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও একটি মামলার তদন্তও শেষ হয়নি। উদ্ধার হয়নি পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া অস্ত্রও। এমনকি পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেননি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
যদিও তদন্ত সংশ্লিষ্টদের দাবি, প্রতিটি মামলায় আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজনৈতিক মামলা বলে তদন্ত শেষ করতে সময় লাগছে। এছাড়া প্রযুক্তিগত ও ম্যানুয়াল সোর্স কাজে লাগিয়ে ছিনিয়ে নেওয়া অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে।
২৮ অক্টোবরকে কেন্দ্র করে সহিংস ও পুলিশ আক্রান্ত মামলাগুলোর তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট তদন্ত ও তদারকি কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন। ওই বৈঠকে ৪৫টি মামলার মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ২২টি মামলা নিয়ে আলোচনা করা হয়। পরবর্তী সময়ে তিনি দ্রুত মামলাগুলোর তদন্ত সমাপ্তি পর্যায়ে রাখার নির্দেশনা দেন। এছাড়া থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশকে যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে ছিনিয়ে নেওয়া অস্ত্র উদ্ধারের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে বাস ভাঙচুরের ঘটনায় রমনা থানায় দায়ের হওয়া মামলায় ৬০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ‘জাজেস কমপ্লেক্সের’ সামনে যানবাহন ভাঙচুরের আরেকটি মামলায় ৬১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ভবনে প্রবেশ করে মিনিবাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ১২ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার অফিসের সামনে গাড়ি ভাঙচুর ও ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শান্তিনগর এক নম্বর লেনে পুলিশের গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন বলেও জানিয়েছে সূত্রটি। জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত ওই ব্যক্তির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আরও দুই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হাইকোর্টের সামনে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় চার আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিউ মার্কেট থানার আরেকটি মামলায় আট জন এবং চকবাজার থানার একটি মামলায় ২৫ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পল্টন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আজহারুল ইসলাম মুকুল জানান, সহিংসতা, ভাঙচুর, পুলিশ আক্রান্ত মামলাগুলো গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। ভিডিও ফুটেজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা অনেক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা এখনও পলাতক, তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, আলোচিত এই ঘটনায় একটি খুনের মামলা হয়েছিল। একজন পুলিশ সদস্যকে দুর্বৃত্তরা পিটিয়ে হত্যা করে। ওই ঘটনায় পল্টন থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। ইতোমধ্যে ১৮ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মূল আসামিদের এখনও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, তারা পুলিশ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ও ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করেছেন। ইতোমধ্যে পুলিশ হত্যায় সরাসরি জড়িত একাধিক ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের ধরতে অভিযানও চালানো হচ্ছে।
বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতায় পল্টন ও শাজাহানপুর এলাকায় পুলিশের আটটি অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। এরপর পরিত্যক্ত অবস্থায় চারটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। কিন্তু বাকি চারটি অস্ত্র উদ্ধার এখনও হয়নি। ওই ঘটনায় পল্টন ও শাজাহানপুর থানায় দায়ের হওয়া মামলায় বিএনপির শীর্ষ বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। ডিএমপি সদর দফতরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অতিরিক্ত কমিশনার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন দ্রুততম সময়ে পুলিশের খোয়া যাওয়া অস্ত্র উদ্ধার করার নির্দেশ দেন। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ ও ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আসামিদের সাজা নিশ্চিত করতে অধিক গুরুত্বের সঙ্গে মামলার তদন্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ভিডিও ফুটেজ থেকে আসামিদের স্থিরচিত্র সংগ্রহ করে মেট্রো ও জেলা পর্যায়ে সব বিট অফিসারদের কাছে পাঠানোর নির্দেশনা দেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতার মামলাগুলোতে আসামি করা হয়েছে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের। একই ব্যক্তি বিভিন্ন মামলায় আসামি হয়েছেন। আবার একই ব্যক্তিকে একাধিক মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। রাজনৈতিক মামলায় সাধারণত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছাড়া আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয় না। গ্রেফতার হওয়া আসামি ও এজাহারে থাকা আসামিদের নাম-ঠিকানা যাচাই করা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে অভিযোগপত্র তৈরি করে রাখার প্রক্রিয়া চলছে।

Facebook
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *