সংবাদ শিরোনাম:

অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান

Facebook
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print

নিজস্ব প্রতিনিধি:

মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০২৩ সালের আগস্টে শুদ্ধি অভিযান শুরু করে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর। দুর্নীতি থামাতে এই অভিযান শুরু করলে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি, প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়োগ জালিয়াতি, ভুয়া সনদ, এমপিও জালিয়াতির চেষ্টাসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ উঠে আসে। গত কয়েক মাসের অভিযানেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তবে হাল ছাড়েনি অধিদফতর। অনিয়মের সঙ্গে জড়িত মাদ্রাসার বিরুদ্ধে একের পর পর এক ব্যবস্থা নিচ্ছে সংস্থাটি।
জানতে চাইলে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. জাকির হোসাইন বলেন, ‘শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এতে অনেক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আমরা অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
এত বেশি অভিযোগের কারণ কী, জানতে চাইলে উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. জাকির হোসাইন বলেন, ‘অভিযোগ বর্তমানেই যে বেশি হচ্ছে, তা নয়। অনেক আগে থেকে অভিযোগ পাচ্ছি। আমরা অভিযান শুরুর পর ব্যবস্থা নেওয়ায় আরও অভিযোগ সামনে আসে। আমাদের এই শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি।’
এর আগে জাকির হোসাইন জানিয়েছিলেন, ‘নিয়োগ ও এমপিও জালিয়াতির কারণে মাদ্রাসার শত শত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শিক্ষকরা যাতে ক্লাস ফাঁকি না দেন এবং দুর্নীতি করতে না পারেন, সে জন্য তাৎক্ষণিক পরিদর্শনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ২২ জন কর্মকর্তা এই দায়িত্ব পালন করছেন।’
তিনি জানান, বেশ কিছু মাদ্রাসার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে এরইমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছে অধিদফতর। আর শতাধিক অভিযোগ তদন্তে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানিয়েছে, জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার ময়েজউদ্দিন দাখিল মাদ্রাসায় জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ‘সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার’ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, যেকোনও নিয়োগের ক্ষেত্রে কমিটিতে ডিজির প্রতিনিধি থাকা আবশ্যক। দেখা গেছে, ময়েজউদ্দিন দাখিল মাদ্রাসায় ‘সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার’ নিয়োগের জন্য গঠিত কমিটিতে ভুয়া ‘ডিজির প্রতিনিধি’ দেখানো হয়েছে। এই অভিযোগে গত ৬ মার্চ ওই মাদ্রাসা প্রধানের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর।
নোটিশের মাধ্যমে জাল-জালিয়াতি করে নিয়োগ পাওয়া ‘সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার’ সাইদুর রহমান ও মাদ্রাসা সুপার মো. আব্দুল হামিদের বেতন ভাতা (এমপিও) সাময়িক স্থগিত করা হয়। এছাড়া ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানাতে সাত দিনের সময় দিয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর।
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বড়ঢালা আমির উদ্দিন দাখিল মাদ্রাসার জুনিয়র মৌলভী রহিমা খাতুন জাল ও ভুয়া শিক্ষক নিবন্ধনের মাধ্যমে এমপিওভুক্ত হন। এ অভিযোগে গত ২৫ মার্চ জুনিয়র মৌলভী রহিমা খাতুনের এমপিও স্থগিত করা হয়। এছাড়া রহিমার ভুয়া কাগজপত্র তৈরি ও অধিদফতরে পাঠানোর অভিযোগে ওই মাদ্রাসার সহ-সুপার মো. হেলাল উদ্দিনের বেতন ভাতা (এমপিও) স্থগিত করে অধিদফতর। এছাড়া কেন তাদের এমপিও স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হবে না, তা পরবর্তী সাত কর্মদিবসের মধ্যে জানতে চাওয়া হয়েছে।
পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার রহমতগঞ্জ হামিদিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহ-সুপার নিয়োগের (সহ-সুপার মো. সাইদুর রহমানের) তথ্য চেয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠালেও মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত চিঠির কোনও জবাব দেয়নি। সহ-সুপার সাইদুর রহমানের নিয়োগ ও যোগদান সংক্রান্ত সব ডকুমেন্ট যাচাই-বাছাই করতে গত ৩ এপ্রিল অধিদফতর থেকে আবারও তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলার হাতিয়র বহমুখী কামিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) মো. সাজ্জাদুল ইসলামের নিয়োগে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ জাল বলে অভিযোগ পায় মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর। এরপর গত ১ এপ্রিল শরীর চর্চার সহকারী শিক্ষককে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র নিয়ে সশরীরে অধিদফতরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
দিনাজপুরের সদর উপজেলার দাইনুর ইসলামিয়া দ্বিমুখী দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. মকবুল হোসাইনের বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতিসহ সনদে ভুয়া জন্মতারিখ রয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছে অধিদফতর। এ কারণে গত ৩১ মার্চ ওই মাদ্রাসার সুপার মো. মকবুল হোসাইনের এমপিও’র কপি, নিয়োগ, যোগদান, শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল কপি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে সাত কর্মদিবসের মধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার রাজপাশা বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সুপার তথ্য গোপন করে প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্যে লিপ্ত আছেন বলে অভিযোগ পায় অধিদফতর। অভিযোগ পাওয়ার পর গত ২৬ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেয় অধিদফতর।
গত তিন মাসে শতাধিক মাদ্রাসা ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের কারণে তাদের এমপিও স্থগিত, অভিযোগের তদন্ত, কারণ দর্শানোর নোটিশ করে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর। শুদ্ধি অভিযানের পর সারা দেশের মাদ্রাসাগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতির আরও অভিযোগ পায় এবং অভিযোগ প্রমাণের পর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. জাকির হোসাইন।

Facebook
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *