সংবাদ শিরোনাম:

২ দিনে ৪০০ ফলগাছের বাগান করে দেন হযরত আলী

Facebook
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print

শেরপুর প্রতিনিধি:

একটি ফল বাগানে ৩০-৪০ প্রকার ফল গাছ থাকলেই সেটাকে পর্যাপ্ত বলা হয়। তবে শেরপুরের কৃষি উদ্যোক্তা মো. হযরত আলীর নার্সারিতে রয়েছে দেশি-বিদেশি চার শতাধিক ফলের গাছ। যার সবগুলোই তিনি নিজে লাগিয়ে ফল সংগ্রহ করেছেন।
প্রথমে ৭৭৪ বিঘা জমিতে মাল্টা বাগান দিয়ে ফল চাষ শুরু করেন তিনি। পরে কমলা, ড্রাগন, কমলা, আঙুর, পেয়ারা, পেঁপে, খেঁজুর, লেবু, ডরিমন, আম, ত্বীন ফল, লিচু, শরিফা, সফেদাসহ ২০টি ফলের বাণিজ্যিকভাবে চাষাবদে যুক্ত করেন তিনি। বর্তমানে তার জমির পরিমাণও বেড়ে ১ হাজার ৮৩ বিঘায় দাঁড়িয়েছে। শুধু ফল বাগান করে থেমে না থেকে তৈরি করেছেন বিশাল আকারের নার্সারি। যেখানে তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন জাতের ১ কোটির উপর ফলের চারা।
আগ্রহী কৃষকদের জন্য দেশের যেকোনো যায়গা থেকে অনলাইরে অর্ডার করলে কুরিয়ারের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে এসব চারা। এছাড়াও দুই দিনের মধ্যে দেশের যে কোনো প্রান্তে গ্রাহকের চাহিদা মত ৪০০ প্রকার ফলের গাছ দিয়ে তৈরি তিনি করে দেন ফলের বাগান। যা দেশের ফল চাষিদের জন্য একটা দৃষ্টান্ত। শুধু চলতি বছরেই তিনি ২০ কোটি টাকার ফল বিক্রির আশা তার। একই সঙ্গে চলতি বছরে অর্ধকোটি ফলের চারা বিক্রি হয়েছে বলে তার দাবি।
তার সাফল্যের পিছনে রয়েছে বিরাট এক গল্প। এক সময় অভাব অনটনে বাড়ি ছেড়ে ভাগ্যের অন্বেষণে ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন শেরপুর জেলার কুঠুরাকান্দা গ্রামের হযরত আলী আকন্দ। মো. হযরত আলী সদর উপজেলার কুঠুরাকান্দা গ্রামের হাজী ইব্রাহিম খলিলুল্লাহর ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় তিনি। মুদি দোকানের কর্মচারি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছিলেন জীবিকার তাগিদে। নানা চরাই-উৎরাই পেরিয়ে তিনি সাফল্য পান মুদি পণ্যের পাইকারি বাণিজ্যে। শূন্য থেকে পৌঁছেছেন কোটির ঘরে। এরপর নতুন সাফল্যের খোঁজে বিনিয়োগ করেছেন কৃষিতে। ইতোমধ্যে তার কৃষি আয়োজন কলেবরে বেড়েছে অনেক খানি। সব মিলে প্রায় ৭২ হাজার ফলবান গাছ রয়েছে তার বাগানে। বিষমুক্ত ফল উৎপাদনে সব ধরনের সহায়তা করেছে কৃষি বিভাগ। ২০২৩ সালে ১৫ কোটি টাকা ফল বিক্রি করেছেন তিনি। এবার ২০২৪ সালে ফল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন প্রায় ২০ কোটি টাকার।
হযরত আলী বলেন, সুপরিকল্পিত উদ্যোগ নিলে কৃষিতে বিনিয়োগে ঝুঁকি কম, রয়েছে সাফল্যের সম্ভাবনা। এ ফল বাগানের এক পাশে আমি লালন পালন করছি হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল, ভেড়া ও কবুতর। এখানেও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে অনেক বেকারের। আমার নার্সারী ও ফল বাগানে প্রতিদিন অস্থায়ী ভিত্তিতে ৩০ থেকে ৪০ জন শ্রমিক কাজ করে। তাদেরও বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা হয়েছে। স্থানীয় আগ্রহী কৃষকসহ দেশের বিভিন্ন যায়গা থেকে চাষাবাদ পদ্ধতি দেখার জন্য ঘুরতে আসে অনেকেই। আগ্রহী কৃষকদের জন্য আমার দরজা সব সময় খোলা থাকে।
শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক হুমায়ুন কবীর বলেন, দেশের যেকোনো প্রান্তে মাত্র দুই দিনের মধ্যে ৪০০ জাতের ফলগাছ দিয়ে বাগান তৈরি করে দিতে পারা একটি বড় সাফল্য। এ অসাধ্য সাধন করেছেন হযরত আলী। এছাড়াও দেশের যেকোনো যায়গায় ছাদ বাগানের প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ বাগান তৈরি করে দেন তিনি। তার ফল বাগান ও নার্সারী নিয়মিত ভিজিট করে সহায়তা প্রদান করছে কৃষি বিভাগ। এছাড়াও এই উদ্যোক্তা দেশের কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বলে দাবি করেন এ কর্মকর্তা।

Facebook
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *