শাহাজাদী সুলতানা:
ভাইকে হত্যা করা হয়েছে এমন দাবি তুলে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করে থানায় মামলা করেছিলেন নিহতের ভাই। এরপর নিহতের স্ত্রী মুন্নি বেগমসহ বাবু ফকিরকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। আদালতের এজলাসে স্বীকারোক্তিমূলক জবান বন্দি দিচ্ছিলেন মুন্নি বেগম। এসময় আদালতের বারান্দায় বসে থাকা আসামী বাবু ফকির পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে গেছে।
শনিবার (২৭-এপ্রিল) বিকেল ৪ টা ১০ মিনিটের দিকে শরীয়তপুরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালত এজলাসের সামনে এই ঘটনাটি ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পালং মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ।
পালিয়ে যাওয়া আসামী বাবু ফকির(২৫) শরীয়তপুর সদর উপজেলার পূর্ব কোটাপাড়া এলাকার মিয়া চান ফকিরের ছেলে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার রাতে নড়িয়া উপজেলার জপসা ইউনিয়নের মাইজপাড়া রাড়ী কান্দি গ্রামের মৃত আমিন উদ্দিন ফকিরের ছেলে মোহাম্মদ আলী মাদবর নিখোঁজ হয়। পরদিন শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান চাঁন মিয়া মাদবরের বাড়ির সামনের পুকুর থেকে মোহাম্মদ আলী মাদবরের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। এরপর গতকাল শুক্রবার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে অজ্ঞাত আসামীদের নামে পালং মডেল থানায় মামলা দায়ের করে নিহতের বড় ভাই কেরামত আলী মাদবর।
পুলিশ বাবু ফকিরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসলে বাবু ফকির পুলিশকে জানায় নিহতের স্ত্রী মুন্নি বেগমও হত্যার সঙ্গে জড়িত। অন্যদিকে হাসপাতাল থেকে নিহতের স্বজনরা জানতে পারে মোহাম্মদ আলী মাদবর ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলো। এরপর বাড়িতে এসে স্বজনরা নিহত মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী মুন্নি বেগমের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে মুন্নি বেগম শুক্রবার বিকেলে তাদেরকে জানায়, ভাতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামীকে পরকীয়া প্রেমিক মামুন চৌকিদার ও তার সঙ্গীদের কাছে তুলে দিয়েছে সে।
এরপর মুন্নি বেগমকে আটক করে থানা পুলিশকে খবর দেয় নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী। পুলিশ মুন্নি বেগমকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়। পরে আজ (শনিবার) দুপুরে মুন্নি বেগম ও বাবু ফকিরকে প্রিজন ভ্যানযোগে পালং মডেল থানা থেকে শরীয়তপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ আদালতের সামনে আনা হয়। আসামিদের বুঝে নেয় কোর্ট পুলিশ। এরপর বিকেল ৪ টা ১০ মিনিটের দিকে এজলাসের সামনে থেকে পুলিশ সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যায় আসামী বাবু ফকির। আসামী পালিয়ে যাওয়ার পর ২০ থেকে ২৫ টি টিম ইতোমধ্যে তাকে ধরতে অভিযান পরিচালনা করছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পালং মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আদালতের এজলাসের সামনে থানা ও কোর্ট পুলিশের তত্ত্বাবধানে ছিলো আসামীরা। এসময়, বাবু ফকির নামে একজন আসামী পালিয়ে গেছে। এই ঘটনায় থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো: মাহবুবুল আলম এই ঘটনায় মামলার প্রস্তুতির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, যেহেতু একজন আসামী (বাবু ফকির) কাস্টডি থেকে পালিয়ে গেছে। তাই পালিয়ে যাওয়া আসামী বাবু ফকিরকে ধরতে সারা জেলার সকল পুলিশ সদস্যরাই কাজ করছে।