স্পোর্টস ডেস্ক:
সংক্ষিপ্ত স্কোর: জিম্বাবুয়ে ১৮.৩ ওভারে ১৫৮/২ (জনাথান ক্যাম্পবেল ৮, সিকান্দার রাজা ৭২* ; মারুমানি ১, ব্রায়ান বেনেট ৭০)
বাংলাদেশ ২০ ওভারে ১৫৭/৬ (জাকের ২৪*, সাইফউদ্দিন ৬*; তানজিদ ২, সৌম্য ৭, হৃদয় ১, শান্ত ৩৬, সাকিব ২১, মাহমুদউল্লাহ ৫৪)
আগের ম্যাচে লড়াই করেও অল্পের জন্য জিততে পারেনি। তবে শেষ টি-টোয়েন্টি ৮ উইকেটে জিতে হোয়াইটওয়াশ এড়াতে পেরেছে জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের দেওয়া ১৫৮ রানের লক্ষ্য সফরকারীরা ৯ বল হাতে রেখে টপকেছে। তাতে স্বাগতিকরা সিরিজ শেষ করেছে ৪-১ ব্যবধানে।
মিরপুরে ১৫৮ রানের লক্ষ্যে শুরুতেই স্বাগতিকদের ওপর চড়াও হয়ে খেলেছেন ওপেনার বেনেট। তার ব্যাটে ভর করেই দিশা পেয়েছে সফরকারী দল। পাওয়ার প্লেতে একটি উইকেট পড়লে সিকান্দার রাজা হন তার যোগ্য সঙ্গী। এই জুটিই জয়ের পথটা তৈরি করেছে। শুরু থেকে ঝড় তুলে খেলা বেনেট ৪৯ বলে ৭০ রানে ফিরলেও পরে সমস্যা হয়নি। বরং শুরুতে সতর্ক থেকে খেলা রাজা তার পরেই চড়াও হয়েছেন আরও। তুলে নেন ১৪তম ফিফটি। চার-ছক্কা মেরে শেষ দিকে আরও চড়াও হওয়াতে ১৮.৩ ওভারেই ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়ে সফরকারীরা। অধিনায়ক রাজা ৪৬ বলে ৭২ রানে অপরাজিত থেকেছেন। তাতে ছিল ৬টি চার ও ৬টি ছয়। ক্যাম্পবেল ছিলেন ৮ রানে অপরাজিত।
বাংলাদেশের হয়ে ৯ রানে একটি নেন সাকিব আল হাসান। ৫৫ রানে একটি নেন সাইফউদ্দিনও।
বেনেটের আউটের পর রাজার ফিফটি
বেনেট আউট হলেও জিম্বাবুয়েকে আটকাতে পারেনি বাংলাদেশ। বরং রানের গতি বাড়িয়ে ৪১ বলে ১৪তম ফিফটি তুলে নিয়েছেন অধিনায়ক রাজা। তার ব্যাটেই জিম্বাবুয়ে আশা টিকিয়ে রেখেছে।
বেনেটকে ফিরিয়ে প্রতিরোধ ভাঙলেন সাইফউদ্দিন
সাকিবের আঘাতের পর পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেট হারিয়ে ৪১ রান সংগ্রহ করে জিম্বাবুয়ে। বেনেটের ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পর তাকে সঙ্গ দিতে থাকেন অধিনায়ক সিকান্দার রাজাও। তাতে সফরকারীদের মাঝে আশার সঞ্চারও হতে থাকে। বেনেট তো ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। ৩৬ বলে ছুঁয়েছেন অর্ধ শতক। দুজনের জুটিও পঞ্চাশ ছাড়িয়েছে। আশা জাগানো ৭৫ রানের এই জুটি ভেঙেছে বেনেটের বিদায়ে। সাইফউদ্দিনের বলে উঠিয়ে মারতে গেলে ক্যাচে পরিণত হয়েছেন তিনি। তাতে ৪৯ বলে ৭০ রানে থেমেছেন বেনেট। তার ইনিংসে ছিল ৫টি চার ও ৫টি ছয়ের মার।
সাকিবের হাত ধরে এলো প্রথম উইকেট
১৫৮ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে উড়ন্ত সূচনা করেছে জিম্বাবুয়ে। শুরু থেকে চড়াও হয়ে খেলেছেন ওপেনার ব্রায়ন বেনেট। ঝড়ো ব্যাটিং করেছেন তিনি। তাতে ৪ ওভারেই উঠেছে ৩৭ রান। তবে আরেক ওপেনার মারুমানি ছিলেন বাক্সবন্দী। ৪.১ ওভারে আগ্রাসী হতে গিয়েই বিপদ ডেকে আনেন তিনি। সাকিব আল হাসানের বলে উইকেট ছেড়ে বের হয়ে এসেছিলেন। জাকের আলী সঙ্গে সঙ্গেই উইকেট ভেঙে দেন।মারুমানি ফিরেছেন ১ রানে।
জিম্বাবুয়েকে ১৫৮ রানের লক্ষ্য দিয়েছে বাংলাদেশ
মিরপুরে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি। ১৫ রানে পড়ে যায় ৩ উইকেট। তাতে চাপে পড়ে গেলেও বাংলাদেশ দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় মাহমুদউল্লাহর আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে। তার ফিফটিতেই দেড়শ ছাড়ানো স্কোর পেয়েছে স্বাগতিকরা। শেষ দিকে সাকিব-মাহমুদউল্লাহ দ্রুত না ফিরলে স্কোরটা হয়তো আরও বড় হতো।
শান্তকে নিয়ে প্রথমে ৬৯ রানের জুটি গড়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। এই জুটি ভাঙার পর সাকিবকে নিয়েও ৩৯ রান যোগ করেছেন তিনি। সাকিবের আউটের পর মাহমুদউল্লাহ ৫৪ রানে বিদায় নিলে শেষ দিকে জাকের আলীর ব্যাটে ৬ উইকেটে ১৫৭ রানে গিয়ে থেমেছে বাংলাদেশ।
জিম্বাবুয়ের হয়ে ব্রায়ান বেনেট ২০ রানে ও মুজারাবানি ২২ রানে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন। একটি করে নিয়েছেন লুক জঙওয়ে ও মাসাকাদজা।
৫৪ রানে থামলেন মাহমুদউল্লাহ
১৫ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর মাহমুদউল্লাহর আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়েই ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। শান্তর সঙ্গে যোগ করেন ৬৯ রান। তার পর সাকিবকে সঙ্গে নিয়েও ৩৯ রান যোগ করেছেন। তুলে নিয়েছেন অষ্টম ফিফটি। কিন্তু সাকিবের বিদায়ের পর ৫৪ রানে কাটা পড়েছেন মুজারাবানির স্লোয়ার ডেলিভারিতে। তিনি ক্যাচ দিয়েছেন সিকান্দার রাজাকে।
মাহমুদউল্লাহর ফিফটির পর আউট সাকিব
শান্তর বিদায়ে দারুণ জুটি ভাঙলে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে যোগ দেন সাকিব। মাহমুদউল্লাহ প্রান্ত আগলে স্কোরবোর্ড সচল রাখার চেষ্টা করছেন। তুলে নিয়েছেন অষ্টম ফিফটি। সাকিব কিছুক্ষণ সঙ্গ দিলেও বেশি দূর যেতে পারেননি। জঙউইর বলটি ফ্লিক করতে গিয়ে আকাশে উঠিয়ে দিয়েছেন। তাতে ১৭ বলে ২১ রানে থেমেছেন বামহাতি অলরাউন্ডার। তাতে ছিল ১টি ছক্কার মার।
শান্তর বিদায়ে ভাঙলো গুরুত্বপূর্ণ জুটি
১৫ রানে পড়ে তিন উইকেট। পাওয়ার প্লেতেই দ্রুত উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় স্বাগতিকরা। তার পর নাজমুল হোসেন শান্ত-মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দুর্দান্ত জুটিতে ঘুরে দাঁড়ানো। দুজনে যোগ করেন ৬৯ রান। আক্রমণাত্মক জুটিটি মাথা ব্যথার কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেই জুটি ভাঙে শান্তর বিদায়ে। মাসাকাদজার বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। তাতে ২৮ বলে ৩৬ রানে থেমেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ইনিংসে ছিল ৫টি চার ও ১ ছক্কার মার।
পাওয়ার প্লেতে তিন উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ
পাওয়ার প্লেতে ১৫ রানে তিন উইকেট পড়ে যাওয়ায় সেভাবে রান আসেনি বাংলাদেশের। ৬ ওভারে এসেছে ৩৩ রান। দ্রুত তিন উইকেট পড়ে যাওয়ায় রানের চাকা শ্লথ হয়ে পড়ে। এই রানও হতো না। মাহমুদউল্লাহ পঞ্চম ওভারে টানা তিনটি চার মারাতেই গতি আসে রান চাকায়।
হৃদয়ের বিদায়ে পাওয়ার প্লেতে পড়লো তৃতীয় উইকেট
দ্রুত ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশের হয়ে প্রতিরোধ গড়তে পারেননি হৃদয়। বরং আরও বিপদ বাড়িয়েছেন। বেনেটের ঘূর্ণিতে পুরোপুরি পরাস্ত হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন ১ রানে। ব্যাক অব লেংথের বলটায় কিছুটা টার্ন ছিল। হৃদয় নিজেও সেটা খেলেছেন দেরি করে। তাতে বল আউট সাইড এজ হয়ে জমা পড়ে কিপারের কাছে।
ব্যর্থ সৌম্য ফিরেছেন ৭ রানে
শুরুতে আক্রমণাত্মক হওয়া সৌম্য তৃতীয় ওভারে ফিরেছেন আলগা শট খেলতে গিয়ে। বেনেটের স্পিনে উইকেট বিলিয়ে ৭ রানে ফিরেছেন তিনি। বলটা অফ স্টাম্পের বাইরে টার্ন করেছিল। সৌম্য কিছুটা সরে যাওয়ায় যেভাবে খেলতে চেয়েছিলেন সেটা পারেননি। বল চলে যায় ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টের ফিল্ডারের হাতে।
দ্বিতীয় ওভারেই মুজারাবানির শিকার তানজিদ
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা দুর্দান্ত ছিল বাংলাদেশের। প্রথম ওভারেই চড়াও হন সৌম্য সরকার। আসে ৯ রান। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারে চড়াও হতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন সঙ্গী ওপেনার তানজিদ তামিম। সিরিজে দারুণ ব্যাটিংয়ে সর্বাধিক রান করা এই ব্যাটার শেষ ম্যাচে মোটেও জ্বলে উঠতে পারলেন না। মুজারাবানির শর্ট লেংথের ডেলিভারিটি শরীর থেকে যথেষ্ট বাইরের দিকে যাচ্ছিল। সেই বলটি টেনে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ হয়েছেন ২ রানে।
সিরিজের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে জিম্বাবুয়ে
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। জিতেছে চারটি ম্যাচেই। মিরপুরে আজ সফরকারীদের হোয়াইওয়াটশ করার মিশন। তবে শেষ ম্যাচে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে তারা।
বাংলাদেশ একাদশে তিন পরিবর্তন
বাংলাদেশ দলে পরিবর্তন আছে ৩টি। বাদ পড়েছেন তানজিম হাসান, তানভির ইসলাম ও তাসকিন আহমেদ। একাদশে ঢুকেছেন মাহমুদউল্লাহ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও শেখ মেহেদী হাসান। জিম্বাবুয়ে দলে অবশ্য পরিবর্তন একটি। বাদ পড়েছেন রিচার্ড এনগারাভা। ঢুকেছেন শন উইলিয়ামস।
বাংলাদেশ একাদশ: তানজিদ হাসান, সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), তাওহীদ হৃদয়, সাকিব আল হাসান, জাকের আলী (উইকেটরক্ষক), মাহমুদউল্লাহ, রিশাদ হোসেন, শেখ মেহেদী হাসান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও মোস্তাফিজুর রহমান।
জিম্বাবুয়ে একাদশ: তাদিওয়ানাশে মারুমানি, ব্রায়ন বেনেট, সিকান্দার রাজা (অধিনায়ক), শন উইলিয়ামস, ক্লাইভ মাদান্দে (উইকেটরক্ষক), জনাথান ক্যাম্পবেল, রায়ান বার্ল, লুক জঙউই, ফারাজ আকরাম, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা, ব্লেসিং মুজারাবানি।