সংবাদ শিরোনাম:

রাসেলস ভাইপারের দংশনে মৃত্যুর চেয়ে সুস্থতার হার বেশি

Facebook
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print

রাজশাহী প্রতিনিধি:

রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চল ও পদ্মার চর থেকে শুরু করে বাসা-বাড়িতেও দেখা মিলছে বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপের। ভয়ে খেত-খামারেও নামতে পারছেন না কৃষকরা। দিন দিন বাড়ছে সাপে কাটা রোগী। এই সাপের কামড়ে চিকিৎসার জন্য আলাদা কোনো এন্টিভেনম নেই রাজশাহীতে। সব সাপের কামড়ের চিকিৎসা চলে একই এন্টিভেনম দিয়ে।
সাপ গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ প্রজাতির সাপ কামড়ালে তারও চিকিৎসা আছে এবং সময়মতো চিকিৎসা নিতে পারলে মৃত্যু ঝুঁকি কমে আসে। রাসেলস ভাইপার মোটেও দেশের সবচেয়ে বিষধর কিংবা প্রাণঘাতী সাপ নয়। এই সাপের কামড়ে মৃত্যুর চেয়ে সুস্থতার হার বরং বেশি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (রামেক) তথ্যমতে, ২০২৩ সালে রামেক হাসপাতালে সাপে কাটা রোগী ভর্তি হয় মোট ২১৩ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৬৪ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ৪৯ জন। সুস্থতার হার ৭৭ শতাংশ।
উপকূলে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে রাসেলস ভাইপার
২০২৪ সালের ১২ জুন পর্যন্ত মোট ৫৯ জন সাপে কাটা রোগী রামেক হাসপাতালে ভর্তি হন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫০ জন। মারা গেছেন ৯ জন। সুস্থতার হার ৮৪ শতাংশ।
২০২৩ সালে রাজশাহীতে রাসেলস ভাইপার কামড়ায় ৫০ জনকে। এর মধ্যে মারা গেছেন ১৩ জন। সুস্থ হয়েছেন ৩৭ জন। সুস্থতার হার ৭৪ শতাংশ।
দ্রুত এন্টিভেনম নিতে হবে
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু শাহীন গবেষণা করেছেন রাসেলস ভাইপার নিয়ে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৬০ থেকে সত্তরের দশকে তানোর, গোদাগাড়ীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে এই সাপের আধিক্য থাকলেও আশির দশক থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত রাসেলস ভাইপার অদৃশ্য হয়ে যায়। এরপর ২০১৩ সালে প্রথম রামেক হাসপাতালে এই সাপে কাটা রোগীর দেখা মেলে।
আবু শাহীন বলেন, রাসেলস ভাইপারের বিষ হেমোটক্সিন প্রকৃতির। কামড়ের সঙ্গে সঙ্গে মানবদেহের টিস্যুগুলো দ্রুত ধ্বংস হয়ে যায়। কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। ক্ষতস্থানে পচন ধরে। প্রায় ৬০ ভাগ রোগী কিডনিতে সমস্যার কারণে মারা যায়। তবে যত দ্রুত সম্ভব এই সাপে কাটার পরপরই এন্টিভেনম নিতে হবে।
‘আমাদের দেশে তিনটি সাপের জন্য একটি ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। এটি মূলত ভারতীয় ভ্যাকসিন। ৭০ শতাংশ কাজ করে। যদি আমাদের এই অঞ্চলে সাপের ভ্যাকসিন তৈরি হতো তাহলে শতভাগ কাজ করত। মৃত্যুর হারও কমে আসতো।’ বলে মনে করেন আবু শাহীন।
সাপ ও সরীসৃপ বিশেষজ্ঞ বোরহান বিশ্বাস রোমান বলেন, রাসেলস ভাইপার মে থেকে জুলাই মাসের মধ্যে বাচ্চা দেয় এবং একসঙ্গে ৬ থেকে ৯০টি বাচ্চা দিয়ে থাকে। গোখরাসহ অন্যান্য বিষধর সাপ থেকে এর আচরণ কিছুটা ভিন্ন। রাসেলস ভাইপার বন্যার পানিতে এসে রাজশাহীর নদী কিংবা চরাঞ্চলে বসবাস করছে। বর্তমানে রাজশাহী এই সাপের আশ্রয়স্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুধু দুটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এন্টিভেনম
রাসেলস ভাইপারের কামড়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও রাজশাহীর ছয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এন্টিভেনম নেই। শুধু তানোর ও চারঘাট উপজেলায় রয়েছে। ফলে এই সাপে কামড় দিলেই ছুটে আসতে হচ্ছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
মিরসরাইয়ে রাসেলস ভাইপার নিয়ে গুজব
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন গোদাগাড়ীর হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘মাঠে কাজ করতে গিয়ে সাপে কামড় দিয়েছিল। পরে রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এখন ভালো আছি। এই সাপের জন্য গোদাগাড়ীতে ওষুধ নেই। তাই বাধ্য হয়েই রাজশাহী ছুটে আসতে হয়েছে।’
পর্যাপ্ত এন্টিভেনম আছে
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. শংকর কুমার বিশাস বলেন, ‘আমাদের এখানে যে এন্টিভেনমটি আছে সেটি পলিভেনম। সারা দেশেই আছে। এটি শুধু রাসেলস ভাইপারের জন্য নয়। বিষধর সাপের জন্যই এই এন্টিভেনম ব্যবহার হয়। হাসপাতালে বর্তমানে দুই হাজারেও বেশি ডোজ এন্টিভেনম আছে। দুই একদিনের মধ্যে আরও আসবে।’
রাজশাহী জেলার সিভিল সার্জন ডা. আবু সাঈদ মো. ফারুক বলেন, ‘আমাদের দুটি উপজেলায় এন্টিভেনম আছে। বাকিগুলোতে দুই একদিনের মধ্যে চলে আসবে। পাশাপাশি আমাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজেও পর্যাপ্ত এন্টিভেনম আছে। উপজেলাগুলোতেও এখন এন্টিভেনম রাখা হচ্ছে, যেন সহজেই সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা দেওয়া যায়।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেছেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিষ প্রতিষেধক বা এন্টিভেনম আছে এবং সব জায়গায় হাসপাতালগুলোতে এন্টিভেনম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর বা বিষ নিষ্ক্রিয় করতে পারে এমন উপাদানকে এন্টিভেনম বলা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে, ২০২৩ সালে দেশে সাপের কামড়ে চার লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে সাত হাজার মানুষ মারা গেছেন যাদের বেশিরভাগই কোবরা ও কেউটে প্রজাতি সাপের কামড়ের শিকার হয়েছেন। তবে রাসেলস ভাইপারের কামড়ে কতজন মারা গেছেন তার সুনির্দিষ্ট হিসেব পাওয়া যায়নি।

Facebook
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *