রাজশাহী প্রতিনিধি:
এবার রাজশাহীর আমের উৎপাদন নিয়ে বাগানি, চাষি, ব্যবসায়ী, কৃষি কর্মকর্তা—কেউ হিসাবের সমীকরণ ঠিকমতো মেলাতে পারছেন না। এ কারণে লাভের প্রত্যাশাতে আছে শঙ্কা। কারণ প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে মুকুল, গুটি নিয়ে ছিল শঙ্কা। ফলন নিয়েও দুশ্চিন্তা এখনও কাটেনি। তবে গাছে গাছে আমের সংখ্যা কম থাকলেও আকার বড় হওয়ায় কিছুটা আশাবাদী সবাই। শেষ পর্যন্ত দেখার কথা বলছেন চাষিরা।
রাজশাহীজুড়ে এবার আম উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা আছে। এমনিতেই গাছে মুকুল এসেছিল কম। যেসব মুকুল এসেছিল সেগুলো থেকে গুটিও এসেছে কম। ঠিক সময়ে বৃষ্টির বদলে ছিল গরম। এতে ঝরে পড়েছে গুটি। তবে গাছে এখন যে আম আছে, সেগুলো আকারে বড়। এতেই আশায় স্বপ্ন বাঁধছেন বাগানিরা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, জেলায় ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এসব গাছ থেকে দুই লাখ ৬০ হাজার ১৬৪ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কা আছে। গত বছর আম বিক্রি থেকে চাষিদের আয় হয়েছিল এক হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। এবার সে হিসাব নিয়ে আগেই মন্তব্য করতে চান না কৃষি কর্মকর্তারা।
এমনটি জানিয়ে বাঘার আম বাগানের মালিক আব্দুল কাদের বলেন, ‘উৎপাদন নিয়ে আশাবাদী নই। কারণ মুকুল কম। গুটিও ছিল কম। এখন যদি ঝরে পড়ে তাহলে আশাবাদী হওয়ার কী আছে। প্রকৃতি যদি সহায় হয়, তবে হয়তো হতাশা কাটবে। শেষ সময়ে এসে আমের আকার দেখে কিছুটা ভরসা পাচ্ছি।’
গাছে যে আম আছে তা টিকিয়ে রাখতে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। গাছ রয়েছে প্রায় ৭৫ লাখ ৭৯ হাজার ৮২৫টি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন।
শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর এলাকার বাগান মালিক মো. শামীম বলেন, ‘এ বছর মুকুল কম আসায় গুটিও কম এসেছিল। আবার গুটি ঝরেও পড়েছে অনেক। তবে শেষ সময়ে এসে আমের আকারে স্বস্তি এসেছে।’
শিবগঞ্জ উপজেলার লাউঘাট্টা এলাকার মিজানুর রহমান বলেন, ‘এবার আমের উৎপাদন কম হতে পারে। এতে ফলনও কম হবে। তবে গাছে আমের সংখ্যা কম হওয়ায় আকার বড় হয়েছে। ফলে ওজন বেশি হবে। তখন লাভের অংশও অন্যবারের তুলনায় আশা করি কম হবে না। এটাই আমাদের এখন ভরসা।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলেন, ‘এবার আমের অফ ইয়ার। অর্থাৎ এক বছর গাছে বেশি মুকুল এলে পরের বছর কম আসে। ঝরে পড়ার বিষয়টি এখনও বেশি নয়। তবে গরম দীর্ঘ হওয়ায় ফলন কমবে এটার শঙ্কা ছিল। তা কেটেছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের রাজশাহী অঞ্চলের উপপরিচালক ড. মোতালেব হোসেন বলেন, ‘আমের অফ ইয়ার ও অন ইয়ার বলে একটা বিষয় প্রচলিত আছে। বড় গাছগুলোর ক্ষেত্রে বিষয়টি বেশি দেখা যায়। গত বছর যেহেতু ফলন বেশি হয়েছিল, এবার কম হবে। তবে ছোট গাছগুলোতে আম মোটামুটি ভালো আছে। গত বছরের চেয়ে এবার উৎপাদন খুব কম হবে বলে মনে হয় না। আমাদের পর্যবেক্ষণে উৎপাদনের বিষয়টি উঠে এসেছে। তবে ঠিক কী পরিমাণ উৎপাদন হবে, তা অগ্রিম বলা ঠিক হবে না।’
রাজশাহীতে আম পাড়ার বিষয়ে রবিবার (১২ মে) আলোচনা সভায় বসবেন জেলা প্রশাসক। ট্রেনে আম পরিবহনের বিষয়ে অংশীজনদের নিয়ে শনিবার রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে অংশীজনদের নিয়ে আলোচনা সভায় বসেছেন রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম। সভায় জানানো হয়, পঞ্চমবারের মতো চালু হচ্ছে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। এবার ট্রেন যাবে পদ্মা সেতু দিয়ে। এটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর থেকে বিকাল ৪টায় ছেড়ে রাত সোয়া ২টায় ঢাকায় পৌঁছাবে। এটি চালু হবে আগামী ১০ জুন থেকে। ছয়টি লাগেজ ভ্যানের মাধ্যমে পরিবহন করা যাবে ২৮ দশমিক ৮৩ টন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর স্টেশন থেকে প্রতিদিন বিকাল ৪টায় ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। যাত্রাপথে রহনপুর স্টেশন থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, আব্দুলপুর, ঈশ্বরদী, পোড়াদহ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও ভাঙ্গাসহ ১৫টি স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেবে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন।
এদিকে, নাটোরে আগামী ১৫ মে থেকে আম ও ২০ মে লিচু পাড়ার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা বাগান মালিক, ব্যবসায়ী, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাসহ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এ তারিখ ঘোষণা করেন।
সভায় ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী স্থানীয় মোজাফফর জাতের লিচু ২০ মে এবং বোম্বাই ও চায়না লিচু ২৭ মে থেকে পাড়া যাবে। এছাড়া স্থানীয় গুটি জাতের আম ১৫ মে থেকে পাড়া যাবে। গোপালভোগ ২৫ মে, রানী পছন্দ ৩০ মে, লক্ষণভোগ ৫ জুন, খিরসাপাত ৩০ মে, ল্যাংড়া ১২ জুন, মোহনভোগ ২০ জুন, হাড়িভাঙা ২৫ জুন, ফজলি ৩০ জুন, আম্রপালি ২৫ জুন, মল্লিকা ৫ জুলাই, বারি ১০ জুন, আশ্বিনা ২০ জুলাই ও গৌরমতি ২০ আগস্ট থেকে পাড়া ও বাজারজাতকরণ করতে পারবেন চাষিরা। এর আগে আম বা লিচু বাজারজাত করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়গুলো মনিটরিং করতে কৃষি বিভাগের পাশাপাশি প্রশাসন আলাদা তদারকি ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।