সংবাদ শিরোনাম:

যে ৭ কারণে ঝড় তুলল ‘তুফান’

Facebook
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print

বিনোদন ডেস্ক:

‘সালমান খানের ছবিতে শুধু সালমান খানই থাকেন, আর কিছু থাকে না’—২০১০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত পবিত্র ঈদুল ফিতরে সালমান খানের মুক্তি পাওয়া প্রায় সব সিনেমাই সুপারহিট। অনেক সমালোচককে তখন বলতে শোনা গেছে, সিনেমা হিট হয়েছে ঠিক আছে কিন্তু ছবিতে এটা নেই, সেটা নেই। তখন ‘ভাইজান’-এর ভক্তরা উপরিউক্ত বহুল চর্চিত উত্তরটি দিতেন। একইভাবে ছবিতে শাকিব খান আছেন—দর্শককে হলে টানতে এটাই যথেষ্ট। হিন্দি সিনেমায় এ প্রবণতা কমে গেলেও দক্ষিণ ভারতে, বিশেষ করে তেলেগু সিনেমা এখনো বড় তারকানির্ভর।
সিনেমায় কী আছে না আছে, সেসবের ধার ধারেন না ভক্তরা, প্রিয় তারকার ছবি দেখতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। গত কয়েক বছরে সমালোচকদের কাছে পাত্তা না পাওয়া অনেক তেলেগু সিনেমা ১০০ কোটি রুপির বেশি ব্যবসা করার এটাই একমাত্র ব্যাখ্যা। তারকানির্ভর থেকে সরে যাওয়া—হিন্দি সিনেমার ব্যবসা মন্দের অন্যতম কারণ বলেও মনে করেন অনেক বিশ্লেষক। যে কারণে শাহরুখ খানের পর সালমান খানও এখন দক্ষিণি পরিচালকনির্ভর হয়ে উঠছেন।
তাই বাংলাদেশে শাকিব খানের ভক্তরা, মোটাদাগে অন্তর্জালে যাঁদের ‘শাকিবিয়ান’ বলা হয়, তাঁরা যে প্রিয় তারকার সিনেমা দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়বেন, এ আর আশ্চর্য কী। ‘তুফান’-এর ক্ষেত্রেও সেটা হয়েছে। সিনেমা হলে বসে ‘তুফান’ দেখার সময় আপাতদৃষ্টে সাধারণ একটি দৃশ্য ঘিরেও ভক্তদের যে উল্লাস, তাতে বুঝতে কষ্ট হয় না, তাঁদের কাছে পর্দায় শাকিব খান থাকলেই হলো, আর কিছু চাই না।
টিজার, গান থেকে ট্রেলার—‘তুফান’-এর প্রতিটি কনটেন্ট নিয়ে অন্তর্জালে যেভাবে আলোচনা হয়েছে, রিলস, টিকটক ভিডিও হয়েছে; সাম্প্রতিক আর কোনো ঢাকাই সিনেমার ক্ষেত্রে সেটা দেখা যায়নি। প্রথমে মুক্তি পায় ‘তুফান’-এর টিজার। এরপর একে একে আসে দুটি গান ‘লাগে উরাধুরা’, ‘তুফান এল রে’। সর্বশেষ মুক্তির এক দিন আগে পূর্বঘোষণা ছাড়াই আসে ট্রেলার। প্রতিটি কনটেন্টই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছে, দেশি দর্শকেরা তো বটেই, ভারতীয় ইউটিউবাররাও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
টিজার ও ট্রেলারে শাকিব খান ও চঞ্চল চৌধুরীর উপস্থিতি, শাকিবের লুক, আবহ সংগীত থেকে শুরু করে বিভিন্ন দৃশ্যের বিস্তারিত বিশ্লেষণও করেছেন অনেক সমালোচক। ‘লাগে উরাধুরা’ মুক্তির পর ছবির প্রচার যেন আরও গতি পায়। গানটিতে শাকিব খান, মিমি চক্রবর্তীর গ্ল্যামারাস উপস্থিতি, প্রীতম হাসানের নাচ এটিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। টিজার, গান আর ট্রেলার নিয়ে এসব আলোচনা সিনেমাটিকে ব্যাপক পরিচিতি দিয়েছে, যা সব ধরনের দর্শককে সিনেমাটির প্রতি আরও আগ্রহী করে তুলেছে।
ঢাকাই সিনেমার সবচেয়ে বড় তারকা ঠিক আছে কিন্তু তাঁর অভিনয়ের আরও উন্নতির জায়গা আছে—শাকিব খানকে নিয়ে মোটাদাগে এমন সমালোচনা ছিল। কিন্তু ‘তুফান’-এর নতুন শাকিব সবাইকে চমকে দিয়েছেন নিজের অভিনয়দক্ষতা দিয়ে।
অ্যাকশনের দৃশ্যগুলোতে তো বটেই, রোমান্টিক, আবেগের দৃশ্যগুলোতে তাঁর অভিনয়, শরীরী ভাষার তারিফ করেছেন সাধারণ দর্শক। সিনেমায় শাকিব খানকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়, এসব বৈচিত্র্যময় দৃশ্যে তাঁর পারফরম্যান্স ছিল চমকে দেওয়ার মতো। আরেকটি দৃশ্যে হতাশ হওয়ার পর যখন তাঁর সঙ্গে নাবিলার ঝগড়া হয়, সে দৃশ্যেও দারুণ করেছেন শাকিব খান। সিনেমায় কয়েকটি দৃশ্য ছিল এমন, যেখানে সংলাপ ছিল না, সেসব দৃশ্যেও ভালো করেছেন তিনি।
শাকিব খানকে এ সিনেমায় যেভাবে দেখা গেছে, আগে খুব কম পরিচালকই পর্দায় তাঁকে এভাবে হাজির করতে পেরেছেন। ক্যারিয়ারের অন্যতম চ্যালেঞ্জিং চরিত্র পেয়ে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন অভিনেতা। যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা জানেন, ‘তুফান’-এ শাকিব খানের লুকের বৈচিত্র্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অ্যাকশন, গান, কান্না—সব ধরনের দৃশ্যেই মানানসই হয়ে উঠেছেন তিনি। এসব গল্প সিনেমা মুক্তির আগে নয়; বরং মুক্তির পর মানুষের মুখে ছড়িয়েছে। উপমহাদেশের সিনেমার ক্ষেত্রে যা হয়, মানুষের মুখে মুখে সিনেমা আরও ছড়িয়ে পড়ে। ‘তুফান’-এর ক্ষেত্রেও তা–ই হয়েছে।
‘তুফান’ দুই ঘরানার সিনেমার দর্শক পেয়েছে। শাকিব খানের ভক্তরা যেমন সিনেমাটি দেখতে গেছেন, তেমনি চঞ্চল চৌধুরীর ভক্তরাও গেছেন। দুই ঘরানার সিনেমার দর্শকের আগ্রহের কারণে সিনেমাটি আরও জনপ্রিয় হয়। এ প্রসঙ্গে সিনেমার অভিনেত্রী মাসুমা রহমান নাবিলা প্রথম আলোকে বলেন, ‘শাকিব খান ২৫ বছর ধরে সিনেমা করছেন। তাঁর একটা আলাদা দর্শকশ্রেণি আছে। অন্যদিকে “আয়নাবাজি”র সাফল্যের পর অনেকে সিনেমা করার সাহস পেয়েছেন। পরে এ ধরনের সিনেমা হয়েছে। এই ঘরানার একটা আলাদা দর্শক তৈরি হয়েছে, যাঁরা হয়তো চঞ্চল চৌধুরীর কাজ দেখতেই হলে আসতে চান। এখন এক সিনেমায় যদি শাকিব আর চঞ্চল চৌধুরী থাকেন, তাহলে দারুণ ব্যাপার হয়। কারণ, আমরা যারা অন্য ধরনের কাজ করেছি, তারাও শাকিব খানের দর্শকের কাছাকাছি যেতে পেরেছি। আবার অন্য ঘরানার সিনেমার দর্শকেরাও শাকিব খানকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেছেন। তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, শাকিব খান কত বড় মাপের অভিনেতা। শুধু শুধু তো আর তিনি সুপারস্টার হননি।’
‘তুফান’ নির্মিত হয়েছে নব্বইয়ের দশকের প্রেক্ষাপটে। ফলে সিনেমাটির কস্টিউম, সেট, লুক খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মুক্তির পর সবই উতরে গেছে। সিনেমাটিতে যেভাবে নব্বইয়ের দশকের বাংলাদেশকে তুলে ধরা হয়েছে, সেটার প্রশংসা করেছেন সাধারণ দর্শকেরা। একই সঙ্গে প্রশংসিত হয়েছে তাহসিন রহমানের সিনেমাটোগ্রাফিও। এই সময়ের দর্শকেরা সিনেমায় বিভিন্ন কারিগরি দিকের দিকেও তীক্ষ্ণ নজর দেন। আবহ সংগীত কেমন, অ্যাকশনের দৃশ্যগুলোতে মিউজিক কেমন—সেসব নিয়েও নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানান। তাঁরাও প্রশংসা করেছেন এ সিনেমার বিভিন্ন কারিগরি দিকের।
শুরুর পর থেকেই সিনেমায় নিজের ছাপ রেখেছেন নির্মাতা রায়হান রাফী। ‘তুফান’ও সেটার ব্যতিক্রম নয়। দেখার পর অনেক দর্শকই রাফীর নির্মাণ নিয়ে নিজেদের ভালো লাগার কথা জানিয়েছেন। রাফীর সব সিনেমাতেই ওয়ান টেক শট থাকে, আছে ‘তুফান’-এও। হাসপাতালে ওয়ান টেক শটের যে দৃশ্যটি আছে, সেটার জন্য নির্মাতার বিশেষভাবে ধন্যবাদ প্রাপ্য। ‘তুফান’-এর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ নিঃসন্দেহে শাকিব খান, রাফী কাজ করেছেন ‘এক্স ফ্যাক্টর’ হিসেবে। ‘রাফহান রাফীর ভক্ত হয়ে যাচ্ছি’—‘তুফান’ দেখার পর সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন অনেক দর্শক। কেবল নায়ক বা নায়িকা নন, পরিচালক নিজেই যে আলাদা ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেকে দর্শকের কাছে দাঁড় করিয়েছেন, এটাও কম কথা নয়।

Facebook
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *