নিজস্ব প্রতিনিধি:
প্রায় পুরো এপ্রিল মাস ধরেই সারা দেশে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। উষ্ণ থেকে উষ্ণতর হয়ে উঠেছে প্রকৃতি। মানুষ ও প্রকৃতি দুইই যেন অপেক্ষা করছে বৃষ্টির। এদিকে দীর্ঘদিনের খরা নার্সারি ব্যবসায়ীদের ওপর যেমন প্রভাব ফেলেছে একইসঙ্গে গাছপ্রেমীদের ওপরও। তাই গরমের পর বৃষ্টির জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন নার্সারি ব্যবসায়ী ও গাছপ্রেমীরা।
নার্সারি ব্যবসায়ীরা জানান, গরমের তীব্রতা বৃদ্ধির ফলে গাছের চারা বিক্রি কমে গেছে। আবার বৃষ্টি হলে নতুন করে গাছ লাগানোর জন্য চাহিদা বাড়বে বলে আশা করছেন তারা। অপরদিকে গাছপ্রেমীরাও অপেক্ষায় রয়েছেন বৃষ্টির। বৃষ্টি হলে তারা বাগানে নতুন গাছ লাগাবেন, চলছে তাদের সেই প্রস্তুতিও।
রাজধানীর ইস্কাটন ও দোয়েল চত্বর এলাকার নার্সারিগুলোতে সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, নার্সারি ব্যবসায়ী ও গাছপ্রেমীদের বর্তমান পরিস্থিতি।
‘আল্লাহর দান’ নামে এক নার্সারির বিক্রেতা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের নার্সারিতে প্রায় ৫০ রকমের গাছ আছে। ইনডোর-আউটডোর সব ধরনের গাছ আছে। নার্সারি ব্যবসার সিজন মূলত শীতকালে। ওই সময় প্রচুর ফুল ফোটে। মানুষ ফুল গাছ বেশি কিনে তাই শীতকালে আমাদের বেচাকেনা বেশি থাকে।’
চলমান তাপপ্রবাহে গাছের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কিনা বা বেচাকেনা কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বেশি গরমে গাছের সমস্যা হয় যদি পর্যাপ্ত পানি না পায়। আমার যেহেতু ব্যবসা তাই নিয়মিত পানি দেই। আমাদের কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে বেচাকেনা কম, কারণ গরমে মানুষ আসে না। গরম কমলে, বৃষ্টি হলে বেচাকেনা বাড়বে আশা করি।’
আরেক গাছ বিক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘নার্সারি ব্যবসার সিজন শীতকাল হলেও বর্ষাকাল হচ্ছে গাছ লাগানোর সবচেয়ে ভালো সময়। তাই বর্ষাকাল এলে আমাদের বিক্রি কিছুটা বাড়বে।’
সিফাত জিম নার্সারির বিক্রেতা নাদিরা আক্তার বলেন, ‘ইনডোর আউটডোর মিলিয়ে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ রকমের গাছ আমার কাছে আছে। তবে এখন ফুল গাছের পরিমাণ কম। পাতাবাহার জাতীয় গাছ বেশি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার কাছে শুধু গাছ না, বিভিন্ন রকমের সার, সার মেশানো মাটি, ফুলের টব, গাছের বিভিন্ন ওষুধও আছে।’
ব্যবসার অবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যবসা আমার ভালোই চলে। তবে গরমের কারণে কিছুটা ভাটা পড়েছে। গরম কমলেই আবার ঠিক হয়ে যাবে।’
গাছ বিক্রি তেমন না থাকলেও সার, মাটি এগুলো বিক্রি হচ্ছে। আর বিকালে রোদ কমলে কেউ কেউ এসে গাছ কিনে নিয়ে যায়। এমনটা বলছিলেন এক নার্সারির বিক্রেতা মঞ্জু।
গরমে গাছের কিংবা ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মঞ্জু বলেন, ‘গাছের কোনও ক্ষতি হয়নি। কারণ নিয়মিত যত্ন নিই। তবে গরমে বেচাকেনা কমে ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি হলে সেটা কমে আসবে আশা করি।’
এ সময় নার্সারিতে গাছ কিনতে এসেছিলেন মাহমুদা আক্তার। তিনি বলেন, ‘ছাদে গাছ লাগানো আমার শখ। আমার ছাদে অনেক রকমের ফুল গাছ আছে। কয়েকটি ফল গাছও আছে। আজ বেলি ফুল আর জিনিয়া ফুল গাছ কিনেছি। আগে বেলি ফুল গাছ ছিল, গরমে মরে গিয়েছে বলে আজ আবার কিনলাম।’
আলতাফ হোসেন নামের এক ক্রেতা এসেছিলেন নার্সারিতে। তিনি কোনও গাছ কিনেননি। তিনি বলেন, ‘আমার বাসার ছাদে গাছ লাগাই। সেগুলোর জন্য সার মিশ্রিত মাটি কিনতে এসেছিলাম। কয়েকদিনের মধ্যে নাকি বৃষ্টি হবে, এখনই নতুন সার মাটি দিয়ে রাখলে গাছগুলো আরও ভালোভাবে বড় হবে।’