মোঃ ফরিদ উদ্দিন, পটুয়াখালী:
দেশের সমুদ্র জলসীমার ভেতর মাছের প্রজনন ও মাছের বংশ বিস্তার বাড়াতে মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।
কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারনে সাগরে মাছ ধরে জীবীকা নির্বাহকারী লাখো জেলে সম্প্রদায়ের মধ্যে বেড়েছে উদ্বেগ। জেলেরা বলেন, বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে বিভিন্ন ধাপে ১৪৭ দিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ায় লাখো জেলে ও ব্যবসায়ীর মেরুদন্ড ভেঙ্গে গেছে। জেলেরা যে সরকারি সহায়তা পান, তা অপ্রতুল। ফলে তাদের জীবন কাটে চরম দুর্দশায়। মা ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা, মার্চ-এপ্রিল ৬০ দিনের অভয়াশ্রমের শেষ হতে না হতেই আবার ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এমনিতেই তাদের রোজগারের টান পড়ায় ঋন আর ধারদেনায় জর্জরিত তারা। এই ১৪৭ দিন ছাড়াও ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা ধরায় ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রঞ্জাপন জারি করেছে মৎস্য সম্পদ মন্ত্রনালয়। সেখানে বলা হয়েছে, সামদ্রিক জলসীমার ভেতর মাছের বংশ বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষন এবং টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ২০২৪ পর্যন্ত মোট ৬৫ দিন এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
ভাই ভাই ফিসের পরিচালক শাহ আলম হাওলাদার জানান, পটুয়াখালী জেলার সবচেয়ে বড় দুটি মৎস্য বন্দর মহিপুর ও আলীপুর। এখান থেকে কোটি কোটি টাকার মাছ চালান হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে গত কয়েক বছর যাবৎ বছরে দুবার নিষেধাজ্ঞা, বৈরি আবহাওয়া, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধি। সব মিলিয়ে এই পেশা এখন হুমকির মুখে।
ট্রলারের মালিক ইব্রাহিম হাওলাদার বলেন, কোম্পানির কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা দাদোন নিয়ে দুইটা ট্রলার তৈরি করেছি। ২ বছরে এখন পর্যন্ত লাভের মুখ দেখিনি। এর উপর আবার অবরোধ। তাই, এখন এই পেশায় টিকে থাকা আমাদের মতো মানুষের পক্ষে সম্ভব না।
সরোয়ার মাঝি জানান, ট্রলারে কাজ করে গত বছর ৮০ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে, তা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। আবার ৬৫ দিনের অবরোধ, এই ঋণ পরিশোধতো দূরের কথা ঋণের বোঝা আরো বেড়ে যাবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, অবরোধকালীন সময়ে প্রতিবছর ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমানায় মাছ ধরলেও কোনো ভূমিকা দেখা যায়না প্রশাসনের।
জেলে মাঝি নয়া মিয়া বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ একটি দাবী করে আসছি, ৬৫ দিনের অবরোধকালে আমরা মাছ ধরা বন্ধ রাখলেও পার্শ্ববর্তী ভারতীয় জেলেরা আমাদের দেশের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ শিকার করে। কিন্তু সরকার এখনো এর কোনো প্রতিকার করতে পারলো না। আমাদের দাবী, এই সময়ে আমাদেরও মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করত: নয়তো অবৈধভাবে ভারতীয় জেলে ট্রলারগুলো বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ বন্ধ করা হোক।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, জেলেদের দাবী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করা হচ্ছে। এছাড়াও জেলেদের ঋণসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পরিকল্পনাও চলছে। তিনি আরো বলেন, মূলত দুটি কারণে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। প্রজনন সুবিধায় যাতে মাছ নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়তে পারে। আর অপরটি হলো- ছোট মাছকে বড় হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। যার জন্য বর্তমানে বড় আকারের ইলিশ জেলেদের জালে ধরা পড়ছে। এবার আমাদের অবরোধ ফলপ্রসূ হবে।