বিনোদন ডেস্ক:
পৈতৃক নিবাস গাজীপুরে। তবে তার জন্ম পুরান ঢাকায়, ১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট। এই নগরের আলো-বাতাসে, অলি-গলিতে বেড়ে উঠেছেন তিনি। ছোটবেলায় ছিলেন বড্ড ডানপিটে স্বভাবের। পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন অনুষ্ঠান পণ্ড করায় ছিলেন ওস্তাদ! সেই চঞ্চল কিশোর থেকে তিনি হয়ে উঠেছেন সক্রিয় রাজনীতিক, মুক্তিযোদ্ধা এবং সবশেষে কিংবদন্তি চলচ্চিত্র অভিনেতা।
বলা হচ্ছে, নায়ক ফারুকের কথা। যিনি সত্তর ও আশির দশকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিলেন। পরবর্তীতে জ্যেষ্ঠ চরিত্রেও দাপট বজায় রেখেছেন ঢালিউডে। মজার ব্যাপার হলো, যেই নামে তিনি খ্যাতি অর্জন করলেন, কালজয়ী হলেন, সেটা তার আসল নামই নয়! তার আসল নাম হলো আকবর হোসেন পাঠান দুলু।
মূলত দুলু নামেই পরিবার ও বন্ধু-স্বজনের কাছে পরিচিত ছিলেন তিনি। ফারুক নামটি এসেছে একটি ঘটনাচক্রে। সেই ঘটনা ২০১৬ সালে বিবিসির এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন অভিনেতা। ফারুক জানান, অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান, চলচ্চিত্র পরিচালক এইচ আকবর ও ফারুক নামের এক বন্ধুর পরামর্শে তিনি ‘ফারুক’ নামটি ধারণ করেছিলেন। ‘সুজন সখী’ নায়ক বলেছেন, ‘ছয় দফা আন্দোলনের পর আমি ওয়ান্টেড ছিলাম, যে কারণে নাম দিয়ে দিলো ফারুক। ওরা বলল, এই নামে তোমাকে প্রথমে কেউ ধরবে না। দ্বিতীয়ত, চলচ্চিত্রের নামগুলো ছোট হলে ভালো হয়, সুন্দর হয়—যেমন রাজ্জাক, উজ্জল, ফারুক, আলমগীর, শাবানা; নাম ছোট হলে ক্যাচি হয়।’
ছাত্র জীবনে রাজনীতিতে জড়ান ফারুক। সেই সুবাদে ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯’র গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের আগেই সিনেমায় নাম লেখান ফারুক। এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ তার প্রথম সিনেমা। এটি মুক্তি পায় ১৯৭১ সালে। জনপ্রিয়তা পান ১৯৭৩ সালে খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ছবির মাধ্যমে। পরবর্তীতে তাকে দেখা গেছে ‘গোলাপি এখন ট্রেনে’, ‘সুজন সখি’, ‘নয়নমণি’, ‘আলোর মিছিল’, ‘লাঠিয়াল’, ‘মিয়া ভাই’, ‘সাহেব’ ইত্যাদি সিনেমায়।
অভিনয়ের জন্য ১৯৭৫ সালে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা (লাঠিয়াল) হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন ফারুক। ২০১৬ সালে এই রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন তিনি।
চলচ্চিত্রে দীর্ঘ অধ্যায় পেরিয়ে ২০১৮ সালে ফের রাজনীতির মাঠে নামেন ফারুক। ওই বছর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে ঢাকা-১৭ আসন থেকে জয়লাভ করেন তিনি। কিন্তু অসুস্থতার কারণে সেভাবে দায়িত্ব পালন করে যেতে পারেননি। দীর্ঘ দিন ধরে তিনি কিডনি রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
২০২১ সালের মার্চে সিঙ্গাপুরের এক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় ফারুককে। সেখানে টানা চিকিৎসার পরও সুস্থ জীবনে আর ফিরতে পারেননি তিনি। অতঃপর ২০২৩ সালের ১৫ মে ওই হাসপাতালেই মারা যান ফারুক। আজ (১৫ মে) তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী।
অভিনেতার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দিনটিতে ঘটা কোনও আয়োজন থাকছে না। তবে এ দিন ভোরে পরিবারের সদস্যরা গাজীপুরে তার কবর জিয়ারত করবেন। এছাড়া সেখানে মিলাদ ও এতিম-অসহায়দের খাবারের আয়োজন করা হচ্ছে।