চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
শিগগিরই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হচ্ছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে নামকরণ করা নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এখন দৃশ্যমান। এটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা সী-বিচ পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এখন দৃশ্যমান। এটিতে ওঠানামার জন্য ১৫টি র্যাম্প থাকবে। এর মধ্যে ১৩টি র্যাম্প নির্মাণাধীন রয়েছে। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে যানবাহনের টোলের হার অনুমোদন দিয়েছে। তবে কবে নাগাদ যান চলাচল শুরু হবে, সেই সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ সড়কে সর্বোচ্চ গতিসীমা রাখা হয়েছে ৬০ কিলোমিটার। এখানে নিরাপত্তার জন্য বসানো হবে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে স্পিড ক্যামেরা। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ এই ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করবে। নির্ধারিত গতির চেয়ে যারা কম বা বেশি চালাবে সেসব যানবাহনগুলোকে অটোমেটিক স্পিড ক্যামেরার মাধ্যমে জরিমানার আওতায় আনা হবে।’
সরেজমিন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে দেখা গেছে, চার লেনের দুটি সড়কের একপাশ পুরোপুরি প্রস্তুত। আরেক পাশের কাজ কিছুটা বাকি আছে। বসানো হচ্ছে বৈদ্যুতিক পোল। তাতে লাগানো হবে বাতি। এখনও শুরু হয়নি সিসিটিভি ক্যামেরা এবং স্পিড ক্যামেরা লাগানোর কাজ। এর মধ্যেও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে সামান্য কিছু যানবাহন চলাচল করছে।
এদিকে, এ সড়কে মোটরসাইকেল চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে যান চলাচল শুরুর আগে থেকে এ উড়াল সড়ক দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল করছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনই এ নিয়ম ভাঙছেন বলে অভিযোগ আছে।
সিডিএ সূত্র জানিয়েছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচল করলে কার ১০০ টাকা, জিপ ১০০ টাকা, মাইক্রোবাস ১০০ টাকা, মিনিবাস ২০০ টাকা, বাস ৩০০ টাকা, ট্রাক (চার চাকা) ২০০ টাকা করে টোল দিতে হবে। তবে উড়াল সড়কে চলবে না মোটরসাইকেল, ট্রাক (৬ চাকা) এবং কাভার্ড ভ্যান।
সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন্ শামস্ বলেন, ‘শিগগিরই যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। বর্তমানে এটিতে পোল লাগানো হচ্ছে। চট্টগ্রাম নগরীতে যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। আগে বহদ্দারহাট থেকে দুই-তিন ঘণ্টা লাগতো পতেঙ্গায় যেতে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে এখন মাত্র ২০ মিনিটে যাওয়া যাবে। এটি চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল করলে যানবাহনে নির্ধারিত হারে টোল দিতে হবে। এখানে টোল নেওয়ার জন্য ১৪টি টোল বুথ থাকবে। প্রাথমিকভাবে পতেঙ্গা প্রান্তে চারটি টোল বুথ থাকবে। র্যাম্প নির্মাণের পর বাকি টোল বুথ বসানো হবে। টেন্ডারের মাধ্যমে এ টোল আদায়ের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে এখনও টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি। শুরুর দিকে এই এক্সপ্রেসওয়েতে ২৪টি র্যাম্প থাকার কথা থাকলেও এখন হবে ১৫টি। বর্তমানে দুটি র্যাম্প নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। বাকি র্যাম্পের কাজ উদ্বোধনের পর নির্মাণকাজ শুরু হবে।’
সিডিএ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরীর যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। তিন বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।
দ্বিতীয় দফায় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তৃতীয় দফায় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। এই দফায় সময় বেড়েছে এক বছর। অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা। একই সময়ে প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা করা হয়। সিডিএ’র এই প্রকল্প যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স-র্যাংকিন।
প্রায় ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের, ৫৪ ফুট প্রশস্ত এবং চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ১৫টি র্যাম্পের মধ্যে জিইসি মোড়ে একটি, টাইগারপাসে দুটি, আগ্রাবাদে চারটি, ফকিরহাটে একটি, নিমতলায় দুটি, সিইপিজেডে দুটি, সিমেন্ট ক্রসিং মোড়ে একটি এবং কেইপিজেড এলাকায় দুটি থাকবে।