সংবাদ শিরোনাম:

এক সময় ডাকাতিয়ার পানি মেটাত তৃষ্ণা, এখন দুর্গন্ধে অসুস্থ হচ্ছেন মানুষ

Facebook
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print

কুমিল্লা প্রতিনিধি:

এক সময় ডাকাতিয়া নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন বহু মানুষ। পাড়ের মানুষের তৃষ্ণা নিবারণ হতো নদীর পানিতে। সকাল-সন্ধ্যা নৌকা চলাচল ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এখন কোনটিই আর দেখা যায় না। হারিয়ে যাচ্ছে ডাকাতিয়ার সেই রূপ।
নদীপাড়ের মানুষের জীবনে ডাকাতিয়া হয়ে উঠেছে এখন বিষের কাঁটা। নদীর বিষাক্ত কালো পানিতে এখন আর মাছের দেখা মেলে না। পানিতে পচা দুর্গন্ধে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে।
২০৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ডাকাতিয়া নদীটি বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমানা নদী। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের চাঁদপুর ও কুমিল্লার ওপর দিয়ে বহমান। কুমিল্লায় ডাকাতিয়ার দৈর্ঘ্য ৫০ কিলোমিটার। ডাকাতিয়া নদীকে মেঘনার উপনদীও বলা হয়।
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যর পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে কুমিল্লার বাগমারা দিয়ে এটি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে যা লক্ষ্মীপুর জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত এবং পরবর্তীতে লাকসাম হয়ে চাঁদপুর মোহনায় মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে।
কথিত আছে, এক সময় এই নদী দিয়ে মগ-ফিরিঙ্গি জলদস্যুরা নোয়াখালী ও কুমিল্লায় প্রবেশ করত। এই নদীতেই তারা ডাকাতি করত। ডাকাতদের উপদ্রবের কারণেই নদীটির নাম করা হয় ডাকাতিয়া।
স্থানীয়রা জানান, এক সময় ডাকাতিয়ার পানিতে তৃষ্ণা মেটাত নদীপাড়ের মানুষ। আর এখন দুর্গন্ধে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। কুমিল্লা ইপিজেড ও শহরের যাবতীয় বর্জ্য সিটি কর্পোরেশনের ড্রেন দিয়ে রোহিতা খাল ও সোনাইছড়ি খাল দিয়ে নতুন ডাকাতিয়া নদী, পুরাতন ডাকাতিয়া, গুইঙ্গাজুড়ি নদীতে পড়ে। পরিবেশ দূষণ রোধে প্রশাসনের কোনো ভূমিকা নেই বললেই চলে।
সোনাইছড়ি পানি অথরাইজড ফেডারেশনের সভাপতি শহীদ আহমেদ বাবুল বলেন, ‘কুমিল্লা ইপিজেডের সমস্ত ময়লা-আবর্জনা রোহিতা খাল ও সোনাইছড়ি খাল দিয়ে নতুন ডাকাতিয়া, গুইঙ্গাজুড়ি, পুরান ডাকাতিয়াসহ অন্যান্য নদীতে পড়ে। কুমিল্লা ইপিজেডে ইটিপি থাকলেও যথাযথ ব্যবহার না হওয়ায় ময়লা-আবর্জনার পরিমাণ বেশি হচ্ছে।’
তবে, কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজীব দাবি করেছেন, ডাকাতিয়া নদীতে পড়া ময়লা-আবর্জনা ইপিজেডের নয়। বরং এগুলো কুমিল্লা শহরের বর্জ্য।
তিনি বলেন, ‘ইপিজেডের ভেতরে ময়লা ইটিপি নিষ্কাশন করে ফেলে। বাহির থেকে ইপিজিডিরে ময়লা মনে হলেও এগুলো কুমিল্লা শহরের বর্জ্য।’
উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ও লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ হেলাল চৌধুরী বলেন, ‘ডাকাতিয়ার পানি পরীক্ষা করে দেখব কী কারণে দূষিত হচ্ছে। প্রতিবেদন পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, ‘মাসিক সভায় নদী দূষণ নিয়ে আলোচনা হয়। পরিবেশ দূষণ রোধের দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। এক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশন ভূমিকা রাখতে পারে। পরিবেশ অধিদপ্তর যদি কোনো ব্যবস্থা নেয়, সেক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা লাগলে আমরা করব।’
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়েম ভূঁইয়া বলেন, ‘বিশ্ব ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে মিলে কুমিল্লা নগরীর বর্জ্য নিষ্কাশন নিয়ে কাজ করছি। দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান হবে।’

Facebook
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *