সংবাদ শিরোনাম:

একীভূত হতে পারে কেউ পাস না করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

Facebook
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print

নিজস্ব প্রতিনিধি:

২০২৪ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় ৫১টি প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেনি। এসব প্রতিষ্ঠানকে একই এলাকার অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত করা হতে পারে। কারণ প্রতি বছরই কিছু সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেউ পাস না করার ঘটনা ঘটছে, যার পুনরাবৃত্তি চায় না শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘এবার আমাদের অন্যরকম চিন্তাভাবনা আছে। কয়েক বছর ধরে কেউ পাস না করা প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যালোচনা করে যদি দেখা যায় যে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান এরকমই, তাহলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পাশের অন্য প্রতিষ্ঠানে একীভূত করা যায় কিনা, সেটা করার পরিকল্পনা রয়েছে।
একীভূত করার বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অব্যবস্থাপনার কারণে যদি ব্যাংক একীভূত করা যায়, তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন একীভূত করা যাবে না? রেজিস্ট্রেশন এত সহজ কেন হবে। এদের এখনই আইনি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা উচিত। কিন্তু এতে আমাদের শিক্ষার্থীরা ক্ষতির মধ্যে পড়তে পারে, সে জন্য আমাদের বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে।
কেউ পাস না করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানতে চাইলে আন্তশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সাহা বলেন, ‘আমরা গত বছর ৪টি প্রতিষ্ঠানের পাঠদান অনুমোদন বাতিল করেছি। এবারও করবো। কারণ লেখাপড়া না হলে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করাই জরুরি।’
২০২৪ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় সারা দেশে ২৯ হাজার ৮৬১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ২০ লাখ ৪১ হাজার ৪৫০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এদের মধ্যে শতভাগ পাস করেছে ২ হাজার ৯৬৮টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। আর ৫১টি প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেনি। কেউ পাস না করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ঢাকা বোর্ডের ৩টি, রাজশাহী বোর্ডের দুটি, দিনাজপুর বোর্ডের ৪টি, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ৪২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেউ পাস না করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নন-এমপিও ও এমপিওভুক্ত স্কুল ও মাদ্রাসা রয়েছে। কেউ পাস না ৫১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪১টিই মাদ্রাসা। মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নানা অনিয়ম ও ছাত্রছাত্রী না থাকলেও সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। গত এক বছরে শতাধিক প্রতিষ্ঠানের পাঠদান অনুমোদন, অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্তর অনুমোদন (দাখিল ও আলিম স্তর) ও খোলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই অনুমোদন প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে মাদ্রাসা কিংবা সাধারণ স্কুলের ক্ষেত্রে।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে কালিয়া আড়াইপাড়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। নন-এমপিও এই প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষকসহ ১১ জন শিক্ষক ও তিন জন কর্মচারী রয়েছেন। ২০২১ সালে একজন এবং ২০২২ সালে দুই জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করলেও পরপর গত দুই বছরে এই প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করেনি। ২০২৩ সালে তিন জন ও এবার ২০২৪ সালে পাঁচ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিলেও কেউ পাস করেনি।
টাঙ্গাইলের নাগরপুরের এমপিওভুক্ত ইসলামাবাদ দারুচ্ছুন্নাহ আলিম মাদ্রাসা থেকে দাখিল (এসএসসি সমমান) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এবার কোনও পরীক্ষার্থী পাস করেনি। এই মাদ্রাসা থেকে ২৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেনি কোনও শিক্ষার্থী। ১২ শিক্ষকের এই বিদ্যালয় থেকে মাত্র দুজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।
অভিযোগ রয়েছে—এসব প্রতিষ্ঠানে ঠিকমতো পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হয় না। তাছাড়া ঠিকমতো মনিটরিংও হয় না। আর এমপিওভুক্ত মাদ্রাসাগুলোর প্রতি এক ধরনের সহানুভূতি দেখানো হয় বছরের পর বছর।
মনিটরিংয়ের বিষয়ে শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘নিবিড় ও ধারাবাহিক মনিটরিং প্রয়োজন। সে কারণে মাঠপর্যায়ে লোকবল বাড়াতে হবে। শিক্ষায় অনেক বেশি বিনিয়োগ ছাড়া এটা সম্ভব হবে না।’

Facebook
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *