সংবাদ শিরোনাম:

পাকিস্তান থেকে প্রতি সপ্তাহে কনটেইনারে পণ্য আসে বাংলাদেশে

Facebook
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print

চট্টগ্রাম প্রতিনিধ:

পাকিস্তানের করাচি থেকে কনটেইনার পণ্যবাহী একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছিল গত সোমবার। ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’ নামের জাহাজটি করাচি থেকে দুবাই হয়ে চট্টগ্রামে আসে। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর করাচি থেকে সরাসরি চট্টগ্রামে নোঙর করা প্রথম কোনও জাহাজ এটি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। অনেকে কনটেইনারে থাকা পণ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও আমদানিকারকরা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করার কিছুই নেই। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো দুই দেশের মধ্যে নৌপথে সরাসরি পণ্য পরিবহন যোগাযোগ শুরু হলো। বিষয়টি ইতিবাচক। সারা বছরই পাকিস্তান থেকে পণ্য আসে। তবে এতদিন তৃতীয় দেশ হয়ে আসতো। এখন সরাসরি আসায় আমদানিকারকদের খরচ কমবে। আগে দুই-তিন বন্দর হয়ে আসায় খরচ বেশি হতো।
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাকিস্তান থেকে প্রতি সপ্তাহে কনটেইনার ভর্তি পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। আগে করাচি থেকে তৃতীয় কোনও দেশে আনা হতো। অর্থাৎ সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া কিংবা শ্রীলঙ্কায় কনটেইনার নামিয়ে রাখা হতো। সেখান থেকে চট্টগ্রাম বন্দরগামী জাহাজের মাধ্যমে এখানে আনা হতো। এবার সরাসরি করাচি থেকে আসায় চট্টগ্রামের সঙ্গে নতুন নৌপথ চালু হলো।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রথমবারের মতো করাচি থেকে কনটেইনার ভর্তি পণ্য নিয়ে চট্টগ্রামে জাহাজ আসার বিষয়টি ব্যবসায়ীদের জন্য ইতিবাচক। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার কিছু নেই। আগেও পাকিস্তান থেকে পণ্য আসতো। প্রতি সপ্তাহে পাকিস্তান থেকে পণ্য আসে। বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্পের কাঁচামাল এবং ভোগ্যপণ্য আমদানি হয় দেশে। তবে এতদিন তৃতীয় কোনও দেশ হয়ে চট্টগ্রামে আসতো। এখন থেকে সরাসরি আসবে।’
বন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, কনটেইনার জাহাজটি দুবাই থেকে করাচি হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে সোমবার (১১ নভেম্বর)। এদিন জাহাজটি থেকে ৩৭০ একক কনটেইনার চট্টগ্রামের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে খালাস করা হয়। এর মধ্যে করাচি বন্দর থেকে আনা হয় ২৯৭ কনটেইনার। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আনা হয় ৭৩ একক কনটেইনার। ১২ নভেম্বর ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় জাহাজটি।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান থেকে আসা কনটেইনারে আছে শিল্পের কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য। এসব পণ্যের ওজন ছয় হাজার ৩৩৭ টন। পাকিস্তানের ১৮টি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য সরবরাহ করেছে।
কাস্টমসের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী, পাকিস্তান থেকে জাহাজটিতে করে সবচেয়ে বেশি আনা হয়েছে সোডিয়াম কার্বনেট বা সোডা অ্যাশ। টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় এটি। মোট ১১৫ কনটেইনারে রয়েছে সোডা অ্যাশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আমদানি পণ্য হলো খনিজ পদার্থ ডলোমাইট। ডলোমাইট রয়েছে ৪৬ কনটেইনারে। মোট ৩৫ একক কনটেইনারে আনা হয়েছে চুনাপাথর। ম্যাগনেশিয়াম কার্বোনেট আনা হয়েছে ছয় কনটেইনারে।
এ ছাড়া কাচশিল্পের কাঁচামাল ভাঙা কাচ আনা হয়েছে ১০ কনটেইনারে। শতভাগ রফতানিমুখী পোশাকশিল্পের কাঁচামাল কাপড়, রং ইত্যাদি রয়েছে ২৮ কনটেইনারে। একটি কনটেইনারে রয়েছে গাড়ির যন্ত্রাংশ। এসব পণ্য আমদানি করেছে আকিজ গ্লাস কারখানা, নাসির ফ্লোট গ্লাস, প্যাসিফিক জিনস, এক্স সিরামিকস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
পাশাপাশি ৪২ একক কনটেইনারে পেঁয়াজ আনা হয়েছে। যার পরিমাণ ৬১১ মেট্রিক টন। এর বাইরে ১৪ একক কনটেইনারে আলু আমদানি হয়েছে ২০৩ টন। এই দুটো পণ্য আনা হয়েছে হিমায়িত কনটেইনারে। পেঁয়াজ-আলু এনেছে ঢাকার হাফিজ করপোরেশন, এম আর ট্রেডিংস ও চট্টগ্রামের আল্লাহর রহমত স্টোর।
পাকিস্তান ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আনা কনটেইনারে রয়েছে খেজুর, জিপসাম, পুরোনো লোহার টুকরো, মার্বেল ব্লক, কপার ওয়্যার, রেজিন ইত্যাদি পণ্য। শুধু একটি কনটেইনারে এসেছে হুইস্কি, ভদকা ও ওয়াইন। আরব আমিরাতের ট্রুবেল মার্কেটিং অ্যান্ড ট্রেডিং কোম্পানি থেকে এই পণ্য এনেছে ঢাকার ডিপ্লোমেটিক ওয়্যারহাউস সাবির ট্রেডার্স।
পাকিস্তান থেকে জাহাজে নতুন করে পণ্য আসছে বিষয়টি কিন্তু এমন নয় বলে জানালেন চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ শাহ আলম। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান থেকে সারা বছরই বাংলাদেশে পণ্য আমদানি হয়। বর্তমানে পাকিস্তান থেকে বেশি আমদানি হচ্ছে পেঁয়াজ। এ ছাড়া আমার দফতরে যেসব পণ্যের তথ্য আসে, তার মধ্যে রয়েছে- মসলা, ভুট্টা ও খেঁজুর। জাহাজে করে যে প্রথম কোনও পণ্য পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আনা হয়েছে বিষয়টি এমন নয়। আগেও আসতো, তবে তৃতীয় দেশ হয়ে চট্টগ্রামে আসতো। এবার পণ্য নিয়ে জাহাজটি সরাসরি বন্দরে এসেছে। এর মাধ্যমে পাকিস্তানের করাচি বন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রামের সরাসরি কনটেইনার জাহাজ যোগাযোগ চালু হয়েছে।’
সরাসরি কনটেইনার জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ায় ব্যবসায়ীদের খরচ কমবে বলে জানালেন পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানিকারক খাতুনগঞ্জের ফারুক ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, ‘দুই-তিন জাহাজে দুই-তিন বন্দর ঘুরে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য আসাতে যে টাকা খরচ হতো, এখন সরাসরি এক জাহাজে এলে খরচ অবশ্যই কমবে। এটি আমাদের জন্য ইতিবাচক। আগে জাহাজে করে প্রথমে শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া কিংবা সিঙ্গাপুর বন্দরে পণ্যবাহী কনটেইনার আসতো। এরপর কনটেইনারগুলো চট্টগ্রাম বন্দরমুখী জাহাজে তুলে দেওয়া হতো। এখন নতুন সেবা চালু হওয়ায় সরাসরি করাচি থেকে চট্টগ্রামে পণ্য আসছে। এখন করাচি থেকে জাহাজে বোঝাই করার পর কোনও বন্দরে ওই কনটেইনার নামানোর দরকার হবে না। এতে লাভবান হবেন ব্যবসায়ীরা। আসলে এ নিয়ে সমালোচনার কোনও কারণ দেখছি না।’
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, পানামার পতাকাবাহী ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’ জাহাজ দুবাই থেকে করাচি হয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ঘুরে ইন্দোনেশিয়ায় গেছে। আগামী এক সপ্তাহ অথবা ১০ দিন পর জাহাজটি পুনরায় চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য নিয়ে পৌঁছাবে। এখন থেকে এই রুটে পণ্য আনা-নেওয়া করবে। পাকিস্তানের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরে এই জাহাজ সেবা চালু করেছে দুবাইভিত্তিক কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ‘ফিডার লাইনস ডিএমসিসি’। এটি প্রথমে দুবাই হয়ে পাকিস্তানের করাচি বন্দরে আসবে। এরপর ভারতের মুন্দ্রা বন্দর, ইন্দোনেশিয়ার বেলাওয়ান ও মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসবে। এটি নিয়মিত চলাচল করবে।

Facebook
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *